ইসরাইলি বাহিনীর অব্যাহত বোমা হামলায় মানবেতর জীবনযাপন করছে গাজাবাসী। গত ১৮ মার্চ যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে একতরফাভাবে হামলা শুরু করার আগে থেকেই গাজায় ত্রাণ প্রবেশ বন্ধ করে দেয় দখলদার বাহিনী। এমন পরিস্থিতিতে ক্ষুধার জ্বালায় কিছু গাজাবাসী প্রোটিনের বিরল উৎস হিসেবে সামুদ্রিক কচ্ছপ খাওয়ার দিকে ঝুঁকছেন। খোসা ছাড়ানোর পর, মাংস কেটে, সেদ্ধ করে পেঁয়াজ, গোলমরিচ, টমেটো এবং মশলার মিশ্রণে রান্না করা হয় কচ্ছপ।
কচ্ছপের মাংস রান্না করতে করতেই মাজিদা কানান নামের এক গাজাবাসী বলেন, ‘বাচ্চারা কচ্ছপকে ভয় পেত। তাই আমরা তাদের বলেছিলাম, এটি বাছুরের মাংসের মতোই সুস্বাদু। তাদের মধ্যে কেউ কেউ খেয়েছে আর কেউ খায়নি। ’এর চেয়ে ভালো বিকল্প না পাওয়ায় এ নিয়ে তৃতীয়বারের মতো ৬১ বছর বয়সি কানান তার পরিবারের জন্য কচ্ছপের মাংস রান্না করছেন। ইসরাইলি হামলায় বাস্তুচ্যুত হয়ে তারা এখন দক্ষিণ গাজার বৃহত্তম শহর খান ইউনিসে একটি তাঁবুতে বাস করছেন।
কানান বলেন, ‘কোনও খোলা ক্রসিং নেই এবং বাজারে কিছুই নেই। বাজারে কোনও মাংস নেই। ছোট দুই ব্যাগ সবজি কিনতে আমাকে ৮০ শেকেল (২২ ডলার) গুনতে হয়। সামুদ্রিক কচ্ছপ আন্তর্জাতিকভাবে একটি বিপন্ন প্রজাতি হিসেবে সুরক্ষিত। কিন্তু গাজার জেলেদের জালে ধরা পড়া এসব কচ্ছপকে খাবারের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে। কানান মাংসকে ময়দা এবং ভিনেগারের সাথে মিশিয়ে ধুয়ে ফেলে, তারপর একটি পুরানো ধাতব পাত্রে ধুয়ে সেদ্ধ করেন।
জেলে আবদেল হালিম কানান বলেন, আমরা কখনই কচ্ছপ খাওয়ার আশা করিনি। যখন যুদ্ধ শুরু হয়েছিল, তখন খাদ্যের ঘাটতি ছিল। কোনও খাবার ছিল না। তাই (কচ্ছপের মাংস) প্রোটিনের অন্যান্য উৎসের বিকল্প। বাজারে কোনও মাংস, মুরগি বা সবজি নেই। ’তিনি বলেন, ইসলামী রীতিনীতি অনুসারে ‘হালাল’ পদ্ধতিতে কচ্ছপগুলোকে প্রক্রিয়াজাত করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘যদি দুর্ভিক্ষ না থাকত তাহলে আমরা কচ্ছপ খেতাম না, ছেড়ে দিতাম। তবে আমরা প্রোটিনের অভাব পূরণ করতে চাই। ’ জাতিসংঘের মানবিক বিষয়ক সমন্বয় অফিস সতর্ক করে দিয়েছে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের ইসরাইলে হামলা শুরুর পর থেকে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর গাজা গুরুতর মানবিক সংকটের মুখোমুখি হচ্ছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আঞ্চলিক প্রধান হানান বলখি জুন মাসে বলেছিলেন, কিছু গাজাবাসী এতটাই মরিয়া হয়ে উঠেছে যে তারা পশুর খাবার ঘাস এবং নর্দমার পানি খাচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস ইসরাইলের বিরুদ্ধে সাহায্য সরবরাহ বন্ধ করে গাজাবাসীর বিরুদ্ধে ‘অনাহারকে অস্ত্র হিসেবে’ ব্যবহার করার অভিযোগ তুলেছে।
বাংলাস্কুপ/প্রতিবেদক/এনআইএন